এস এম আব্দুল্লাহ সউদ,কালাই উপজেলা প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নে মোস্তসা মোড় নামক জায়গাতে আঞ্চলিক সড়কের কোল ঘেঁষে বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য মাটি দিয়ে ভরাট করে এক ব্যক্তি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে করে তিন ফসলি জমিতে পানি উঠাসহ অন্তত এক হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। শিগগিরই কাজ বন্ধ করে দ্রুত কালভার্টের মুখে দেওয়া মাটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়,কালাই উপজেলার পাঁচশিরা-মোলামগাড়ী ও করিমপুর-পাঁচ-গ্রাম আঞ্চলিক সড়কের মোস্তসা নামক স্থানে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত বন্যা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কালভার্টের সম্মুখ ভাগে মাটি দিয়ে ভরাট করে দক্ষিণ পাশের মুখ বন্ধ করে এর কোল ঘেঁষে স্থায়ী পাকা বসতবাড়ী ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন পার্শ্ববর্তী বাদাউচ্চ গ্রামের মো.আনছার আলী আকন্দের ছেলে প্রভাবশালী বদরুজ্জামান আকন্দ। ফলে কালভার্টের মুখ ভরাট ও বন্ধ করে বাড়ি নির্মিত হলে বর্ষাকালে উপজেলার পাঁচগ্রাম,মাদারপুর, এলতা ও ইমামপুর গ্রামের প্রায় এক হাজার একর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি পানির চাপে রাস্তায় ভাঙ্গন ধরবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
কালাই উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা জানান,এলাকাটি দক্ষিণ দিকে নিচু হওয়ায় এখানকার ফসলি জমিকে ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কবল থেকে রক্ষা করার জন্য ছয় বছর আগে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) কর্তৃক এই কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়। যাতে বর্ষার সময়ে সড়কের দুই পাশের বন্যা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক থাকে।পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি যেন না হয়। এরপর থেকে বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা পানি ওই কালভার্টের ভিতর দিয়ে দ্রুত নেমে স্থানীয় হারাবতী খালে পড়ে। কিন্তু প্রভাবশালী বদরুজ্জামান আকন্দ কয়েক মাস আগে কালভার্টের দক্ষিণ পাশের মুখ বন্ধ করে এর কোল ঘেঁষে স্থায়ী পাকা বসতবাড়ী ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এ কারণে আগামী বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে এসব মাঠের ফসল তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েই গেল। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন কৃষক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করলেও কোনো কাজ হয়নি। বন্ধ হওয়া তো দূরের কথা,চেয়ারম্যানকে জানানোর পর উল্টা সেখানে কাজ আরও দ্রুত গতিতে চলছে।
পাঁচগ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন, জালাইগাড়ির কৃষক বেলাল হোসেন জানান,কয়েকদিন আগে তারা স্থানীয় জিন্দারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে বিষয়টি অবগত করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি কালভার্টের বন্ধ মুখ খোলার বা বাড়ীর কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেন নি। তারা উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিবেন বলে জানান।
বেগুনগ্রামের কৃষক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, যেভাবে কালভার্টের মুখ বন্ধ করেছে তাতে মন হচ্ছে আর কোনো দিনও এই কালভার্ট দিয়ে পানি চলাচল করবে না। ফলে তিন ফসলি জমিতে ধান, আলুসহ কৃষি পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা রেয়েই গেল।
এলতা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই জানান,এ রাস্তা দিয়ে প্রায়ই ইউএনও ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহ প্রশাসনের অনেকেই যাতায়াত করেন। তারা দেখেও কেন না দেখার ভান করেছেন তা বুঝতে পারছিনা।তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। তাহলে তারা ব্যবস্থা নিবে। আসলে বলার আর কিছুই নেই।
জিন্দারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, কৃষকরা আমাকে অবগত করলে আমি ওই বাড়ীর মালিককে নিষেধ করেছি।তারপরও সে কাজ চলমান রেখেছে।আমি আজকেই বিষয়টি ইউএনওকে জানাব।
কালভার্টের মুখ বন্ধ করে বাড়ী নির্মাণের কথা স্বীকার করে বদরুজ্জামান আকন্দ বলেন,বর্তমানে মাঠে পানি নেই,তাই মুখ বন্ধ করে দিয়েছি।প্রয়োজনে বর্ষা মৌসুমের জমে থাকা পানি আমার বাড়ীর ভিতর দিয়েই পার হয়ে যাবে। তাতে আপনাদের কি ?
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আবুল হায়াত বলেন,এ বিষয়ে আমাকে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। কালভার্টের মুখ খোলাসহ তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।